চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ, রোগীদের চিকিৎসা সেবার মান, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও চিকিৎসকের স্বল্পতা সহ নানা অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওইসময় বিপুল পরিমান মেয়াদ উত্তীর্ণ ভ্যাকসিন ও ওষুধ জব্দ করেছে।
সোমবার (১৪ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুদক কক্সবাজার সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টানা পাঁচ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করেছে।
দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের দুপুরের খাবারে মুরগির পরিবর্তে পাঙ্গাস মাছ দেয়া, প্রতি পিস ১৪০ গ্রাম মাছ দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে দেওয়া হচ্ছিল মাত্র ৬০-৭০ গ্রাম ওজনের, অধিকাংশ রোগীদের নানা অজুহাত দেখিয়ে খাবার দেওয়া হয় না, নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়েও কম দিচ্ছেন খাবার।
তাছাড়া দুদকের কাছে ধরে পড়ে রান্না ঘরের বাসি খাবারও। দুদুকের তদন্তে দলকে দিনের বাসি খাবার রাতে দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রোগী ও স্বজনরা। রান্না করার জন্য বোতলজাত তৈল ব্যবহার করার কথা থাকলেও খোলা তেল ব্যবহার করা হচ্ছে। এই বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ কক্সবাজার দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
হাসপাতালটিতে নিয়মিত ২৮ জন ডাক্তার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও দুদকের উপস্থিতিতে মাত্র ৬জন ডাক্তার পেয়েছেন। অনেক ডাক্তার নিজ কর্মস্থলে আসেও না। কয়েকজন আসলেও অল্প রোগী দেখে কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এছাড়াও হাসপাতালের অপরিষ্কার পরিবেশ, জরুরী বিভাগে হয়রানী এবং নার্সদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগও দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে। টিকেট কাউন্টারে রোগীদের কাছ থেকে সরকারি নির্ধারিত ফি ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকার নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। ওষুধের স্টোর রুম থেকে বিপুল পরিমান মেয়াদ উত্তীর্ণ ভ্যাকসিন ও ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। হাসপাতালের প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত থাকলেও রোগীদের তা না দিয়ে ডাক্তাররা বাইরের দোকান থেকে সংগ্রহ করতে বলছেন বলে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। স্টোর রুমের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তির অবহেলার কারণে অনেক মূল্যবান ওষুধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান দুদকের দল।
তদন্ত দলকে রোগীরা অভিযোগ করে জানান, হাসপাতালের কমমূল্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার থাকলেও মেশিনগুলি নষ্টের অজুহাত দেখিয়ে বাইরে থেকে উচ্চ মূল্যে টেস্ট করাতে পরামর্শ দিচ্ছেন রোগীদের। যা রোগীদের পক্ষে খুবই সাধ্য। ডাক্তার চিকিৎসাপত্রে লিখে বাইরে ওষুধ কিনে নেওয়ার পরামর্শ দেন, হাসপাতালে ভালো মানের ওষুধ নেই বললেও অথচ হাসপাতালের স্টোর রুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষধ সরবরাহ রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জায়নুল আবেদীন দুদককে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত দল। হাসপাতালের আরএমও তদন্ত দলকে হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষে পরিদর্শনে সহায়তা করেন।
চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জায়নুল আবেদীন বলেন, হাসপাতালের যেসব অভিযোগ নিয়ে দুদকের দল কথা বলেছেন, আমি যোগদানের পর থেকে শুনে আসছি এসব অভিযোগের কথা। সমস্যা অনেক কমে গেলেও চিকিৎসকের স্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। চেষ্ঠা করে যাচ্ছি ডাক্তারের স্বল্পতা পূরণ করতে। হাসপাতালটি ৫০ শষ্যার হলেও নিয়মিত রোগী ভর্তি হয় দুইশো’র মতো। চেষ্ঠা করে যাচ্ছি খাবারের বিষয়টি সমস্যা সমাধানের।
এব্যাপারে কক্সবাজার সমন্বিত দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, হাসপাতালে বেশকিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে। নির্ধারিত খাবারের মধ্যে জনপ্রতি মাছ ও মুরগীর ওজনে কম দিচ্ছেন। স্টোরে রুম থেকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ভ্যাকসিন ও ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তারা সকল তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবেন এবং কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ##