জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ—জাকসু নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে ২০টিতেই জয় পেয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা।
প্রায় ৩৩ বছর পর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। ফল ঘোষণা শুরু হয় শনিবার বিকালে; ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর।
ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে ১৫টিতে বিজয়ী হয়েছেন ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের প্রার্থীরা। বাকি চারটি পদের মধ্যে ভিপিসহ তিনটি পদে স্বতন্ত্র এবং একটিতে বাগছাস প্রার্থী জয় পেয়েছেন।
ভিপি পদে ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের’ প্রার্থী ছিলেন আরিফুল্লাহ আদিব। স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতুর কাছে হেরে যান তিনি।
নিজে জয় না পেলেও নিজেদের প্যানেলের নিরঙ্কুশ জয়ে 'সন্তুষ্টি প্রকাশ' করেন এ ভিপি প্রার্থী।
ফল ঘোষণার পর তিনি বলেন, "আমরা এমন একটি পরিবেশ পেয়েছি, যেখানে আমরা আমাদের পরিচয়ে কথা বলতে পারছি। জাহাঙ্গীরনগরের মতো একটি জায়গা, যেখানে শিবির নাম শুনলে পাখির মতো গুলি করে মেরে ফেলা হয়। অতিথি পাখি মারলে বিচার হয়, কিন্তু ছাত্রশিবির যে করে, তাকে যদি পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়, তারপরেও তার বিচার হয় না।
"সে জায়গায় দাড়িয়ে আমরা ছাত্রশিবির একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে পেরেছি। ২৫ জনের মধ্যে ২০ জন আমরা জয়লাভ করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ।"
শিবিরের প্যানেল থেকে নির্বাচিত জিএস মাজহারুল ইসলাম বলেন, "যারা আমাদের নির্বাচিত করেছেন, তাদের আমানতের ভার আমরা যেদিন রক্ষা করতে পারব, সেদিন আমরা বলতে পারব, বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।"
অধিকাংশ পদে জয়ের মধ্য দিয়ে ডাকসুর পর আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নিয়ন্ত্রণ নিল ইসলামী ছাত্রশিবির, যারা এর আগে কখনো জাকসুতে কোনো পদ পায়নি।
নিজেদের প্যানেলের একচেটিয়া জয়ের বিষয়ে মাজহারুল ইসলাম বলেন, "২৯ অক্টোবর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি কার্যক্রম পালনের পর কী পরিমান কুৎসা রটানো হয়েছিল! কিন্তু একটি ছাত্র সংগঠন কতটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে অধিকার আদায়ে কাজ করতে পারে, আমরা দেখিয়ে দিয়েছি। আমরা চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি যাওয়ার।
"কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনে ২৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী প্রার্থী দিয়েছিলাম। বোনরা অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের প্যানেলের ৬ নারীর প্রত্যেকে নির্বাচিত হয়েছেন।"
ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ভিপি পদে ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন জিতু। আরিফুল্লাহ আদিব পেয়েছেন ২ হাজার ৩৮৯ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম ৩ হাজার ৯৩০ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাগছাসের প্রার্থী আবু তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম পেয়েছেন ১ হাজার ২৩৮ ভোট।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের (এজিএস) দুটি পদেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান ২৩৫৮ ভোট এবং আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা ৩৪০২ জয় পেয়েছেন।
অন্যান্য পদে জয় পেয়েছেন
শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক- আবু ওবায়দা ওসামা (শিবির প্যানেল), ২৪২৮ ভোট
পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক- মো. শাফায়েত মীর (শিবির প্যানেল), ২৮১১ ভোট
সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক- মো. জাহিদুল ইসলাম বাপ্পী (শিবির প্যানেল), ১৯০৭ ভোট
সাংস্কৃতিক সম্পাদক- মহিবুল্লাহ শেখ জিসান (স্বতন্ত্র), ২০১৮ ভোট
সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক- মো. রায়হান উদ্দীন (শিবির প্যানেল), ১৯৮৬ ভোট
নাট্য সম্পাদক- মো. রুহুল ইসলাম (শিবির প্যানেল), ১৯২৯ ভোট
ক্রীড়া সম্পাদক- মাহমুদুল হাসান কিরণ (স্বতন্ত্র), ৫৭৭৮ ভোট
সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী)- ফারহানা আক্তার লুবনা (শিবির প্যানেল), ১৯৭৬ ভোট
সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ)- মো. মাহাদী হাসান (শিবির প্যানেল), ২১০৫ ভোট
তথ্যপ্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক- মো. রাশেদুল ইসলাম লিখন (শিবির প্যানেল), ২৪৩৬ ভোট
সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক- আহসাব লাবিব (গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-বাগছাস), ১৬৯০ ভোট
সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (নারী)- নিগার সুলতানা (শিবির প্যানেল), ২৯৬৬ ভোট
সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (পুরুষ)- মো. তৌহিদ হাসান (শিবির প্যানেল), ২৪৪২ ভোট
স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক- হুসনী মোবারক (শিবির প্যানেল), ২৬৫৩ ভোট
পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক- মো. তানভীর রহমান (শিবির প্যানেল), ২৫৫৯ ভোট।
কার্যকরী সদস্য
মো. তরিকুল ইসলাম (পুরুষ, শিবির প্যানেল), ১৭৪৬ ভোট
মো. আবু তালহা (পুরুষ, শিবির প্যানেল), ১৮৫৪ ভোট
মোহাম্মদ আলী চিশতি (পুরুষ, বাগছাস), ২৪১৪ ভোট
নাবিলা বিনতে হারুণ (নারী, শিবির প্যানেল), ২৭৫০ ভোট
ফাবলিহা জাহান নাজিয়া (নারী, শিবির প্যানেল), ২৪৭৫ ভোট
নুসরাত জাহান ইমা (নারী, শিবির প্যানেল), ৩০১৪ ভোট।