প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ৩:৪৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ৫:২১ অপরাহ্ণ
কক্সবাজার চকরিয়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ করেছেন শিল্পীরা। এখন চলছে রং-তুলির আঁচড়ে প্রতিমা রাঙিয়ে তোলার কাজ। পাশাপাশি চলছে সাজ-সজ্জা ও আলোকসজ্জার কাজ। কাল থেকে চণ্ডীপাঠ, ঢাকের বোল,শঙ্খের শব্দ আর উলুধ্বনিতে আমন্ত্রিত হবেন দেবী দুর্গা।
রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হতে যাচ্ছে বাঙালি সনাতনীদের পাঁচদিনের প্রাণের উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। প্রতিমার গায়ে রংতুলির আঁচড় শেষ করতে শেষমুহুর্তে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।
চকরিয়া এবং আশপাশের কয়েকটি উপজেলার শতাধিক মণ্ডপের জন্য অন্তত ৬ শতাধিক বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে চকরিয়া পৌর শহরের চিরিঙ্গা হিন্দু পাড়াস্থ প্রয়াত সারদা মহাজনের বাড়ির সামনে।
চকরিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক বাবু বাবলা দেবনাথ বলেন,আগামী রবিবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হবে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পৌরসভা এবং উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবার প্রতিমা পূজা অনুষ্ঠিত হবে ৪৭টি মণ্ডপে। আর ঘটপূজা অনুষ্ঠিত হবে ৪৪টি মণ্ডপে।
তিনি আরও বলেন,চলতি বছর পৌরসভা এবং উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৪৭টি মণ্ডপে প্রতিমা পূজা এবং ৪৪টি মন্ডপে ঘটপূজা অনুষ্ঠিত হবে। তন্মধ্যে চকরিয়া পৌরসভায় ৭টি এবং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে ৮টি, কাকারা ইউনিয়নে ৩টি, বরইতলী ইউনিয়নে ৬টি,হারবাং ইউনিয়নে ৮টি,ডুলাহাজারা ইউনিয়নে ৮টি,খুটাখালী ইউনিয়নে ১টি,চিরিংগা ইউনিয়নে ১টি,কৈয়ারবিল ইউনিয়নে ৩টি ও পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নে ২টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা পূজা। আর উপজেলাজুড়েই ৪৪টি ব্যক্তিগত মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে ঘটপূজা।
সরজমিন দেখা যায়,চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা হিন্দুপাড়ার প্রয়াত মহাজন সারদা কিশোর দাশের বাড়ির উঠানে এবং পাশ্ববর্তী সৎসঙ্গ কেন্দ্রের নিচতলায় গত একমাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজে নেমে পড়েন শিল্পীরা। প্রতিদিন অসংখ্য কারিগর ও সহকারি বেশ যত্ন সহকারে প্রায় শতাধিক মণ্ডপের প্রতিমা তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফরিদপুর জেলার মৃৎশিল্পী সুশান্ত পালের ‘মা শিল্পালয়’ এবং সুমন পালের ‘শিল্পালয়’ নামের প্রতিমা তৈরির দুটি কারিগরি প্রতিষ্ঠান এসব প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন।
দুই শিল্পালয়ের কারিগররা প্রতিমা তৈরিতে ব্যবহার করেছেন খড়,কাঠ,সুতা ও মাটি। এসব উপকরণ দিয়ে মা দুর্গা এবং তাঁর চার সন্তান গণেশ, কার্তিক,লক্ষ্মী,স্বরস্বতিসহ বিভিন্ন প্রতিমার কাঠামো তৈরি করে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। একেবারে শেষমুহুূর্তে এসে প্রধান কারিগর তাঁর নিপুন হাতের কারিশমায় নানান রঙের তুলির আঁচড়ে এসব প্রতিমা ফুটিয়ে তুলছেন।
চকরিয়ায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করা ফরিদপুরে মৃৎশিল্পী সুশান্ত পাল ও সুমন পাল বলেন,প্রায় সাত বছর ধরে তারা চকরিয়ায় এসে জায়গা ভাড়া নিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন। এই বছরও এই দুই কারখানা থেকে চকরিয়া উপজেলা ছাড়াও পাশের পেকুয়া,ঈদগাঁও,রামু, মহেশখালী উপজেলার প্রায় শতাধিক মণ্ডপের কার্যাদেশ (অর্ডার) পেয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে চলেছেন।
প্রধান দুই মৃৎশিল্পী আরও জানান,সারদা মহাজনের উঠান এবং সৎসঙ্গ কেন্দ্রের পাদদেশে একসঙ্গে শতাধিক মণ্ডপের জন্য প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। সেই হিসেবে বিভিন্ন দেব-দেবী ও সংশ্লিষ্ট দেবতার সঙ্গীয় প্রাণীসহ অন্তত ৬ শতাধিক প্রতিমা তৈরি হচ্ছে এখানে। এখন চলছে এসব প্রতিমায় নানান রঙের তুলির আঁচড় দেওয়া। যেসব প্রতিমা পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে সেসব প্রতিমা একে একে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্ব স্ব মণ্ডপে।
চকরিয়া পৌরসভা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এম আব্দুর রহিম বলেন,২৪ সেপ্টেম্বর পৌরসভা বিএনপি কার্যালয়ে আমরা মতবিনিময় সভা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় চকরিয়া পৌরসভায় ৭ টি পূজা মন্ডপ রয়েছে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে ওয়ার্ড বিএনপির নেতৃবৃন্দ শারদীয় দুর্গোৎসব কে সফল এবং সুন্দর ভাবে করতে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করে যাবে।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার বলেন,শান্তিপূর্ণ ভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের সকল নিরাপত্তা প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিটা মন্দিরে অফিসার সহ ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সাদা পোষাকে গোয়েন্দারা দায়িত্ব পালন করবেন।###