কক্সবাজারের পেকুয়ায় পরকীয়ার অভিযোগ তুলে এক মসজিদের ইমাম ও এক গৃহবধূকে প্রকাশ্যে মারধর এবং নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মুখ খুলেছেন ভুক্তভোগী পরিবার। তাদের দাবি, পরকীয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ সাজানো ও ভিত্তিহীন।
পাওনা টাকা নিয়ে পূর্বের বিরোধের জেরে এ হামলা চালানো হয়েছে। ভুক্তভোগী গৃহবধূ আমেনা বেগম জানান, লামা উপজেলার ৩নং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কুরুপপাতা-ঝিরি এলাকার আনছারা বেগম, এহসান, আরমান, আজিব ও জুমাল নামের কয়েকজনের কাছে তার স্বামী জিয়াবুল হকের পাওনা টাকা ছিল। সেই টাকা উদ্ধারের দাবিতে কিছুদিন আগে তিনি আদালতে মামলা করেন। মামলার কাজে তাকে সহযোগিতা করছিলেন খালাতো ভাই জসিম উদ্দিন মেহেরী। যিনি স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম। আমেনা বেগম বলেন, গত ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় মামলার সমাধান করার কথা বলে বৈঠকে ডাকা হয়।
সেখানে আমি ও আমার খালাতো ভাই জসিম উদ্দিন উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু ওই সময় মামলার আসামিরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। পরে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এতে আমাদের সামাজিকভাবে অপমানিত করা হয়েছে। জসিম উদ্দিন আমার খালাতো ভাই। তার সঙ্গে কোনো পরকীয়া সম্পর্ক নেই।
তার স্বামী জিয়াবুল হক বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে আনছারা বেগম ও তার পরিবারের কাছে কিছু টাকা পাই। সেই টাকা ফেরত চাইতেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। পরে পরিকল্পিতভাবে আমার স্ত্রী ও খালাতো ভাইয়ের ওপর হামলা চালায়। আমাকেও আটক করে নির্যাতন করে। এরপর ওই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের পরিবারকে অপমানিত করা হয়।
এটি পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ ঢাকতে সাজানো নাটক ছাড়া কিছু নয়। স্থানীয় মসজিদের ইমাম জসিম উদ্দিন মেহেরী বলেন, আমি একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ। সেদিন পারিবারিক একটি বিষয় মীমাংসার জন্য বৈঠকে গিয়েছিলাম। কিন্তু পূর্বের বিরোধের জেরে তারা আমাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালায়। আমেনার স্বামীকেও তারা অপহরণ করে। পরকীয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। জসিম উদ্দিনের স্ত্রী হুরে জান্নাত বলেন, আমার স্বামী নিয়মিত নামাজ পড়ান ও কোরআন শেখান। তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে ইসলামকে অপমান করা। যে নারীকে পরকীয়ার অভিযোগে জড়ানো হয়েছে, সে আমাদের আত্মীয়।
ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে। যাতে আমার স্বামীকে হেয় করা যায়। এদিকে, এঘটনার পর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী জসিম উদ্দিন মেহেরী। অন্যদিকে, ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, এই ধরনের ঘটনাকে সামাজিকভাবে বিচার নয়, বরং আইন দিয়ে মোকাবিলা করা উচিত। কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিযোগ থাকলে তা প্রমাণের দায়িত্ব আদালতের, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়। প্রকাশ্যে মানুষকে নির্যাতন করা বর্বরতার শামিল।