ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই দৈনিক পত্রপত্রিকা হাতে নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির এই সংগ্রামী নারী।কড়া রোদকে উপেক্ষা করে আর সবকিছুকে পেছনে ফেলে প্রতিদিন পাঠকের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দিচ্ছেন সত্তোর্ধ্ব শেফালী পাল । অসুস্থতা তাকে গ্রাস করলেও কাজে দমে যাননি তিনি। ছুটছে মহাসড়কের এপার ওপারসহ বাজার ও স্টেশন পয়েন্ট এলাকায়।
শেফালী পালকে সবাই ‘মাসী’ হিসেবে ডাকে। কক্সবাজারের একমাত্র ঈদগাঁওর এ নারী হকার বাজারের অলিগলি, পথে-প্রান্তে খবরের কাগজের বোঝা হাতে নিরন্তর ছুটে চলা এক সংগ্রামী নারী।
ঈদগাঁও উপজেলার প্রধান বানিজ্যিক কেন্দ্রের অলি গলিজুড়ে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পত্রিকা বিক্রি করে থাকেন। সংসারের উপার্জন আর জীবনের গতি সচল রাখতেই শেফালীর এ জীবন যুদ্ধ। পত্রিকা বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছেন। প্রতি দিন পত্রিকা বিক্রি করতে যথাসময়ে ছুটে আসে তারই কর্মস্থলে। দীর্ঘবছর ধরে পাঠকের হাতে পত্রিকা পৌঁছে দিচ্ছে শেফালী পাল।
ঈদগাঁও পালপাড়ার সেই বয়োবৃদ্বা নারী শেফালী পাল তার সন্তান স্বপন (পত্রিকা বিক্রেতা) মারা যাওয়ার পর থেকে পূত্রের পেশাকে আগলে রেখে তিনিই চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে পূত্রবধুও তাকে সহযোগিতা করে থাকেন। শেফালী পাল হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করে। হাতে সব সময় একটি ছাতা থাকে। শেফালীর মতে, সংবাদপত্র বিক্রি করার পেশাটি সম্মানের। নানা পেশা শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে সম্মান পাওয়া যায়। এ পেশায় তাঁর গর্বের শেষ নেই। তিনি চান, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে।
শেফালীর মতে, পূত্র মারা যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগের কাছাকাছি সময় ধরে পত্রিকা বিক্রির মত কঠিন কাজটি বেছে নেন। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও এখন সয়ে যাচ্ছেন। তবে বয়সের ভারে ও নানান অসুখ-বিসুখে পত্রিকা হাতে নিয়ে হাটতে পারছেনা তেমন। তার পরেও পত্রিকা বিক্রির কাজ বন্ধ করেননি।
কজন পাঠক জানান, জীবনের শেষ বয়সে দক্ষ এবং কর্মঠের সাথে শেফালী পাল পত্রিকা বিক্রি করে যাচ্ছে। তার এই কর্মযজ্ঞের প্রতি স্যালুট জানায়।ছেলেদের চেয়েও কর্মঠে কম নয় শেফালী। তিনি দায়িত্ব নিয়ে পত্রিকা বিক্রির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনের কাছ থেকে শেফালী পাল একটি টমটম ( ইজিবাইক) উপহারও পেয়েছিলেন।