নুরুল আমিন। ২৪ এর জুলাই যোদ্ধা। প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটে (অতিরিক্ত) তার গেজেট নম্বর ৭৬৭। তিনি কক্সবাজার ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদের পূর্ব গজালিয়া ঢালার মুখের ছৈয়দ নূরের পুত্র।পিতার দ্বিতীয় সন্তান। পেশায় চট্টগ্রামের এক হোটেল কর্মচারী। ছাত্র-জনতার তীব্র গণ আন্দোলনের সময় তিনি ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকায় হামলার শিকার হন। নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় ছয় দিন পর্যন্ত তার পরিবার কিছুই জানতে পারেনি। ভয়ে ভয়ে ঈদগাঁও, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে চিকিৎসা নেয়া যুবক গত বছরের ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৫-৬ দিন পর্যন্ত তিনি অনাহারে-অর্ধাহারেও বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড় ছিলেন। অল্প শিক্ষিত নুরুল আমিন ছিলেন পরিবারের অন্যতম অর্থ যোগানদাতা।
গত ৩ জুলাই আমিনের বড় ভাই মুসলেম উদ্দিন বাদী হয়ে চট্টগ্রাম বাকলিয়া থানায় মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা ২শ ৫০ থেকে ৩শত জনকে আসামি করা হয়েছে।তার পিতা ও ভাই জানান, বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম যাবার পথে সন্ত্রাসীরা তাকে উপর্যপুরী পাথর নিক্ষেপ ও বন্দুকের ঘুষা মারে। এতে তার কিডনি, পেট ও কুসুমে প্রচণ্ড আঘাত হয় এবং রক্ত জমে যায়।
শহীদের পিতা জানান, বর্তমান সরকারের কাছ থেকে এ পর্যন্ত তার পরিবার ৫-৬ লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছে। গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া এবং পুনর্বাসন ছাড়া তাদের আর কোন দাবী নাই। তিনি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনসহ বর্তমান সরকারের আর্থিক সহায়তায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি আরো জানান, শহীদ নুরুল আমিন দীর্ঘ ছয়-সাত বছর যাবত চট্টগ্রামের একটি হোটেলে চাকরি করে আসছিল। হোটেলের সব কাজে সে পারদর্শী ছিল। হোটেলের কাজের ভিসায় সে সৌদি আরব যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিল। পাসপোর্ট তৈরি শেষে কক্সবাজার গিয়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার কাজও শেষ করেছিল। কিন্তু নিয়তি তাকে ফেভার করেনি। পবিত্র ভূমি সৌদি আরব যাওয়ার আগেই সে পৃথিবী থেকে বিদায় হয়ে গেছে।
৭০ বছর বয়সী এ বৃদ্ধ বলেন, তিনি স্থানীয় বন বিভাগের ভিলেজার। ১৯৯১ সালে এ কাজে যোগ দেন। পাশাপাশি কাঠুরিয়ার কাজও করতেন। ‘ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখতে না পারলে তাদের মনের দুঃখ থেকেই যাবে।’
নুরুল আমিনের পিতা ও ভাই হত্যাকারী ফ্যাসিস্ট ও সংশ্লিষ্ট পুলিশের উপযুক্ত বিচার দাবি করেছেন।
আসামিদের গ্রেপ্তারের আশায় দিনপার করছেন জুলাই যোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। এখনো আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা ‘আসামীদের যথাযথ বিচার দেখতে চাই।’
কক্সবাজারে পুলিশ সুপার মো. সাইফুদ্দীন শাহীন ঈদগাঁওর ইসলামাবাদে এসে শহীদ নুরুল আমিনের কবর জিয়ারত, শহীদের পরিবারবর্গের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ, কুশল বিনিময়, উপহার ও নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ও ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।