কাল চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলন

লেখক: আরাফাত চৌধুরী
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

আগামীকাল শনিবার (২৩ আগস্ট) চকরিয়া উপজেলা বিএনপি’র সম্মেলন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর অনুষ্টিত হতে যাচ্ছে এ সম্মেলন। নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা যাচ্ছে উৎসবের আমেজ। ভিন্ন ধর্মীয় একটি সম্মেলন উপহার দিতে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে নেতাকর্মীরা। নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এবারের সম্মেলনে সভাপতি ও সম্পাদক পদে লড়ছেন অন্তত অর্ধ ডজন প্রার্থী। তারাও পোষ্টার, প্লে কার্ড ও বড় বড় ডিজিটাল ব্যানার ছাপিয়ে নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্ঠা করছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্ত পরিবেশে এই প্রথম সম্মেলন হতে যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন উপজেলা বিএনপি। বিএনপির পাশপাশি অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। চকরিয়া সরকারি কলেজ মাঠে বিশাল মঞ্চ ও প্যান্ডেলের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এ জন্য প্যান্ডেল তৈরি করে সাজানো হচ্ছে মাঠ। চলছে সম্মেলন সফল করার নানা আয়োজন। সম্মেলন ঘিরে পৌরশহরে চলছে সাজসাজ রব। উৎসাহী নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর পুরো এলাকা। চকরিয়া পৌরশহরে পদ প্রত্যাশীদের ঝুলছে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লে কার্ড। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া পৌরশহর থেকে কলেজ মাঠ পর্যন্ত নির্মিত করা হয়েছে অন্তত ১৫-২০টির মতো তোরণ। সম্মেলনে উপস্থিত কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে গঠন করা হবে চকরিয়া উপজেলা বিএনপির কমিটি এমনটা জানালেন নেতাকর্মীরা।

উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেবেন এবং সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচনে সালাহ উদ্দিন আহমদের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত বলে জানান নেতাকর্মীরা।

এদিকে সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, চকরিয়া উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক এনামুল হক, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান খোকন মিয়া, সাবেক সদস্য সচিব অধ্যাপক ফখরুদ্দিন ফরাজী। সাধারণ সম্পাদক পদে উপজেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য সচিব এম মোবারক আলী, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক এ এম ওমর আলী ও সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম সাবু।

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক বলেন, চকরিয়া উপজেলার আওতাধীন ১১টি ইউনিয়নের সম্মেলন সম্পন্ন ও ‘সবার সঙ্গে আলোচনা করেই কাউন্সিলর তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিকভাবে একটি নতুন কমিটি গঠন করতে চাই। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবার আমরা মুক্ত পরিবেশে সম্মেলন করতে যাচ্ছি। আশা করছি আনন্দঘন পরিবেশেই সম্মেলন সফল হবে।’ এছাড়া আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রস্তুতির বিষয়েও তিনি নেতাকর্মীদের বিশেষ বার্তা দেবেন।

এই সম্মেলনকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলন একটি সাংগঠনিক কাজ। এটি দলকে গতিশীল করবে। তিনি বলেন, যারা বিগত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে কাজ করেছেন, মামলার আসামি হয়েছেন, জেলে গেছেন, এমনকি যারা রাজপথে ছিলেন এবং সৎ ও যোগ্য, তারাই নেতৃত্বে আসবেন।

দলীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, সম্মেলন কেন্দ্র করে চকরিয়া উপজেলা বিএনপিতে ঐক্যের সুর দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা দুই ধারায় বিভক্ত থাকলেও তারা ঐক্যবদ্ধভাবে সম্মেলন সফল করতে চান। কারণ চকরিয়া-পেকুয়া আসনে সালাহউদ্দিন আহমদের সিদ্ধান্তের বাইরে কোন কিছু করার সুযোগ নেই।

উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ১২ মার্চ অনুষ্টিত হয়েছিলা চকরিয়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলন। এতে সভাপতি ছিলেন আনসারুল ইসলাম বাবুল মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক ফখরুদ্দিন ফরায়েজী। দুই বছর পর ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। পরে উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান চৌধুরীকে আহবায়ক করা হয়। বছর পার না হতে শাহজাহান চৌধুরী মারা গেলে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হককে আহবায়ক করা হয় এবং অধ্যাপক মু. ফখুরুদ্দিন ফরায়েজী কে সদস্য সচিব করা হয়।

৫ আগস্টের পর আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে আবারও নতুন আহবায়ক কমিটি দেয়া হয়। এতে আহবায়ক এনামুল হককে ঠিক রেখে সাবেক ছাত্রনেতা এম মোবারক আলীকে সদস্য সচিব করে আংশিক কমিটি দেয়া হয়। ওই কমিটি পূর্নাঙ্গ কমিটি ছাড়াই প্রায় এক বছর অতিবাহিত করেন।