কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে অবাক করার মতো এক ঘটনা ঘটেছে। সবে মাত্র মায়ের গর্ভ থেকে পৃথিবীর আলো দেখা। আর জন্মের দু’দিন পর থেকেই দুধ দিতে শুরু করেছে ফুটফুটে একটি বাছুরটি! একদিন কিংবা দু’দিন নয়, জন্মের পর টানা ২০ দিন ধরে নিয়মিত দুধ দিচ্ছে এটি। এ খবরে ইতিমধ্যেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনই আশপাশের গ্রাম থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসছেন খামারের বাড়িতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুধ দেওয়া বাছুরটি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের চরকরণশী গ্রামের খামারি হারুন-অর-রশিদের। সম্প্রতি এই খামারির বাড়িতে জন্ম নেয় একটি বাছুর। জন্মের পর বাছুরটি ছিল একেবারেই স্বাভাবিক। কিন্তু হঠাৎ করেই গত কয়েকদিন ধরে দেখা যায়, বাছুরটির স্তন ফুলে উঠেছে এবং সেখান থেকে দুধ বের হচ্ছে। প্রথমে খামারি নিজেই হতবাক হয়ে যান। পরে প্রতিবেশীদের জানানোর পর ঘটনাটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।
সরেজমিনে করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের চরকরণশী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাটি এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে। প্রতিদিনই শত শত মানুষ ভিড় করছেন খামারির বাড়িতে। কৌতূহল মেটাতে অনেকেই মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছেন। ফলে বাড়িটি এখন এক ধরনের প্রদর্শনীকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বাছুরটি প্রায় আধা লিটার দুধ দিচ্ছে। এই দুধ দেখতে ও খেতে সাধারণ গাভির দুধের মতোই। খামারির পরিবারের সদস্যরা এই দুধ পান করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশের হারুনুর রশিদের একটি বাছুর দুধ দেয়। বিষয়টি আমার কাছে অলৌকিক মনে হয়েছে। দেখতে গেলে দেখি বাছুরটি সত্যি সত্যিই দুধ দিচ্ছে। এটি আসলেই বিরল ঘটনা, যা আমি আমার বয়সে দেখিনি। পরে আমিও সেই দুধ খেয়েছি।’
বাছুরটি দেখতে আসা কবির হোসেন বলেন, ‘নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো না। এটা আল্লাহ তায়ালার কুদরত এবং নেয়ামত। যেভাবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের তা খাওয়াচ্ছেন, ঠিক সেভাবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা একান্ত কর্তব্য।’
দুধ ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া বলেন, ‘আমি ৪৫ বছর যাবৎ গরুর দুধের ব্যবসা করি। কিন্তু আমার জীবনে দেখিনি এমন আজব ঘটনা যে, জন্মের দুই দিন পর থেকে একটি বাছুর দুধ দেয়। অল্পবয়সী যে বাছুরটি দুধ দিচ্ছেন, এটা একটা বিরল ও ব্যতিক্রমী ঘটনা। বিষয়টি শুনে প্রথম বিশ্বাস করছিলাম না। পরে খামারি হারুনুর রশিদের বাড়িতে গিয়ে দেখেছি ঘটনাটি সত্যিই আশ্চর্য হয়েছি।’
স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি জীবনেও দেখিনি এমন অলৌকিক ঘটনা, জন্মের দুই দিন পর থেকে একটি বাছুর দুধ দেয়। আল্লাহর নেয়ামত, আমি নিজেও দেখেছি এবং সে দুধ খেয়েছি।’
খামারি হারুনুর রশিদ জানান, ২০২৩ সালে ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গাভী কিনেন তিনি। ২০ দিন আগে তার খামারের একটি গাভী প্রথমবারের মতো বাচ্চা জন্ম দেয়। জন্মের পর বাছুরটির ওলান অন্যান্য বাছুরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা মনে হয়। অনেকটা বড়। পরে ওলানে হাত দিয়ে দেখেন দুধও আসে। ঘটনাটি তিনি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদেরকে জানান। তারাও এসে দেখেন বিষয়টি। এরপর বাছুরটি সামান্য পরিমাণ দুধ দিতে থাকে। দৈনিক প্রায় আধা কেজি করে দুধ পাওয়া যাচ্ছে। এ দুধ খামারি নিজে ও তার শিশু সন্তান পান করছে। দুধের রং ও স্বাদ স্বাভাবিক বলে জানান তিনি। এটি আল্লাহর রহমত বলে মনে করেন তিনি।
করিমগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল তালুকদার বলেন, ‘দীর্ঘদিনের কর্মজীবনে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি। এ ধরনের ঘটনা বিরল। এটি হতে পারে হরমোনের অস্বাভাবিকতা বা জেনেটিক কারণে। কিছু ক্ষেত্রে ছোট বাছুরের শরীরে হরমোনের তারতম্যের কারণে এমন অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।’